Wednesday, March 7, 2012

Sinha: Poems in Bengali



গদ্য-পদ্য রীতিতে  নিম্মলিখিত কবিতাগুলো লেখক-এর 'সময়ের কবিতা' নামক কবিতা গ্রন্ত্র থেকে নেয়া৷ কবিতাগুলো সম্পর্কে বলতে গিয়ে গ্রন্ত্রটির ভুমিকায় জাতীয় অধ্যাপক  প্রয়াত কবীর চেীধুরী লিখেছেনঃ


অনুভূতি প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম কবিতা৷ সিনহা'র  কবিতায় দেশ, সমাজ, সময়, রাষ্ট্র, রাজনীতি, বিদ্রোহ, ঘৃণা সবই ধার দিযেছে৷ বিদ্যমান সমাজের অনিয়ম, অবক্ষয় কবিকে কষ্ট দেয়৷ আর তাই প্রচলিত সমাজ সম্পর্কে অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ও তীর্যক ভাষায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ এ ক্ষোভ শিল্পীত হয়ে প্রকাশ পায় নানা মাত্রায়৷


সিনহা'র কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের অনশ্বর চেতনার ও প্রগতিশীলতা আমারা লক্ষ্য করি৷ একটি উন্নত, আধুনিক,উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন এই কবি৷ এই চাওয়াতো আমাদের সবারই চাওয়া৷


কবিতার ভুবনে স্বাগতম সিনহা এম এ সাঈদ-কে


(০১)

নেতা যদি হয় নক্ষত্র সমতূল্য

দলীয়, উপদলীয় নেতা, পাতিনেতারা

একই নক্ষত্র বলয়ের গ্রহ-উপগ্রহ সম৷


নক্ষত্রবিহীন গ্রহ উপগ্র যেমন কল্পনা করা যায়না

নেতাবিহীন উপনেতা, পাতিনেতারা তেমনি জন্ম নেয়না৷

এ যেন বৃক্ষ, ডাল ও পাতার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক৷


নক্ষত্রকে ঘিরে যেমন গ্রহ উপগ্রহ

নির্দিষ্ট বলয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে

তেমনি নেতাকে ঘিরে চক্কর খাচ্ছে

উপনেতা, পাতিনেতারা আপন বলয়ের সীমারেখায়৷

উপনেতা, পাতিনেতাদের ঘিরে ডিগবাজি খাচ্ছে

অসংখ্য কর্মী ও সমর্থকরা৷


এখানে বলয় পরিবর্তন যেমন শোভনীয়, সহজ নয়

তেমনি বলয়ের বাইরে অবস্থান করে

নেতার নিকট পৌছানো এক দুরূহ অভিযানতূল্য৷


দলীয় রাজনীতির ধারাই হলো

নক্ষত্র পরিবারে নিজস্ব বলয়ে গ্রহ উপগ্রহের ন্যায়

নেতা পরিবারের আপন বলয়ে উপনেতা পাতিনেতা চক্করে

আনুগত্য ভিত্তিক রাজনীতি চর্চা৷


(০২)

রাতারাতি একজন সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, এমনকি রাষ্ট্রপতি

তৈরী করা বা হওয়া যায়৷

যেমন করে দজর্ীর নিকট যেকোন মাপের

পোষাক তৈরী মামুলী ব্যাপার মাত্র৷

অথচ নেতা হওয়া কোন কারখানার ফরমাইয়েশী বিষয় নয়৷

নেতা গড়ে ওঠে ----------

ক্রিয়া-প্রক্রিয়া, দ্বন্দ্ব সংঘাত

অভিজ্ঞতা-দক্ষতার বিচিত্রতর পটভূমিতে

নেতা ইতিহাসে স্থান করে নেয় আপন মহিমায়

নেতা ভালবাসা, শ্রদ্ধা অজন করেন

কেড়ে নেনা, নেতা বেঁচে থাকে কর্মের মধ্যে

গণমানুষের স্বার্থের মধ্যে৷

নেতা মরে অমর হন

গান্ধী, কায়েদে আজম, সুভাষ, ওয়াশিংটন

শেলে বাংলা, সোহরাওয়াদর্ী, ভাসানী, বঙ্গবন্ধু

কোন সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়৷


এরা নেতা ----------

উজ্জল নক্ষত্রের ন্যায় জাতির জীবনে তারা জ্বলছে, জ্বলবে৷


(০৩)

স্বৈরশাসন -------------

অকাল পরিপক্ক তথাকথিত নেতা উত্‍পাদনের কারখানা

এ যেন হঠাত্‍ গজিয়ে উঠা ব্যাঙের ছাতার মত

সুস্থ সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে

বিশৃংখল তান্ডবলীলার এক ব্যাপক আয়োজন৷


(০৪)

নেতারা যা বলেন, তা করেন না

যা করেন, তা বলেন না৷

নেতারা বক্তৃতা, গলাবাজী পছন্দ করেন

যখন-তখন কর্মসূচী ঘোষণা করে আনন্দ পান৷

বড় বড় সভা-সমাবেশ

শত সহস্র ভাটাটে দর্শক শ্রোতা

গণনবিদারী শ্লেগান আর মুর্হুমুর্হু করতালী

সবই তাদের মৌলিক অধিকারের অন্তভর্ূক্ত

ব্যতিক্রম মানেই ------

চরম মানবাধিকার লংঘনের সামিল৷

হায়রে নেতা!

হায়রে সমর্থক, কমর্ী!

হায়রে জনগণ!

হায়রে দেশ!

সুবিধাবাদী রাজনীতির এ পাঠশালা

আর কতকাল চলবে?


(০৫)

দার্শনিক জরাস্তু বলেছেন-

তুমি যখন কোন কিছুর শীর্ষে অবস্থান করছো

তখনই তোমার মৃতু্য কামনা করো

এ মুতু্য মরে যাওয়ার জন্য নয়

অমরত্বের জন্য৷

ইতিহাসে স্থান করে নেওয়ার জন্য৷

অথচ বর্তমান অবস্থাটাই হল তার উল্টো

নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধের স্বপক্ষে দাঁড়ানো

এক দুঃসহ অভিযান

যেন উত্তাল সাগরের মধ্যে দিয়ে

তরী পার করার অনবরত চেষ্টা৷

সাবধান, তাত্‍ক্ষনিকভাবে রাজাকার আখ্যায়িত

হবার সম্ভাবনাও তীব্র

এখানে রাজাকার মানেই

কোন বিশেষ গুণের ধারক ও বাহক নয়

নিছক অপবাদ, ঘৃণা, নিন্দা, যন্ত্রণা৷


(০৬)

ক্ষমতাসীনদের হ্যা বিরোধী দলের না

বিরোধী দলের হ্যা ক্ষমতাসীনদের না

চলমান রাজনীতির হ্যা-না চক্রে নিপতিত

রঙ্গবসের এ লীলাখেলায়

স্যান্ডউইচবত্‍ জনগণ হতবিহবল, কিংকর্তব্যবিমূঢ়৷

অতঃপর ঃ ..............

আমি পজিশন, অপিজশন বুঝি না

আমি কোন মিথ্যা রাজনীতি চর্চার ধার ধারি না

আমি শুধু বুঝতে চাই রাজনীতি হলো

রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিদ্যমান ধারাকে অধিকতর আধুনিকীকরণ, সুসমন্বিত করা৷

আমি বুঝি রাজনীতি হলো

কোন ব্যক্তি বা দল বিশেষের নিছক স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার নয়

আমি উচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা করতে চাই

রাজনীতি হলো পজিশন ও অপিজশন-এর  যৌথ প্রয়াস

আমি সেই যৌথ প্রয়াসের সুসমন্বিত ধারাকে আলিঙ্গন করছি৷

তারা সমালোচনা করছে ....................

অথচ তারা বিকল্প কোন কর্মসূচী দিচ্ছে না

তারা দাবী করছে এটাই নাকি অপজিশনের ধারা

আমি বলি, সাবধান সময় এসেছে

আর নদর্থক রাজনীতি নয়

এবার শুরু হোক বিকল্প উপস্থাপনভিত্তিক সদর্থক রাজনীতি৷

তবে আমি একতরফাভাবে চাপিয়ে দেয়া

পজিশন ভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মসূচীর সমর্থক নই

এদের মাঝেও আমি দেখতে চাই সদর্থক রাজনীতির ধারা

যেখানে বিকল্প গ্রহণে থাকবে না কোন কার্পণ্য

যেখানে গোষ্ঠী মতবাদের চেয়ে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থেরই হবে জয়

কথায় নয়, কাজে,

বক্তব্য নয়, কর্মসূচীতে

আমি পজিশন অপজিশন উভয়েরই রাজনীতির শুভ যাত্রার

অপেক্ষায় আছি৷

আমি কর্মসূচীভিত্তিক পূর্ব সমঝোতা বিহীন ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠায়

ভূয়সী প্রশংসায় আবেগ আপ্লুত নই

আমি সংসদ বর্জনের রাজনীতির স্বপক্ষে নই

আমি সংসদীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে

আর্টিকেল ৭০ এর দ্রুত বিলুপ্তির পক্ষে বলছি

আমি শুধুমাত্র সরকার পতনের লক্ষ্যে,

শুধুমাত্র সরকার পতনের লক্ষ্যে

জোট ভিত্তিক আন্দোলনের স্বপক্ষে নই

আমি চলমান রাজনীতির হ্যা-না চক্রে নিপতিত

রঙ্গরসের লীলা খেলায় স্যান্ডউইচবত্‍ জনগণের

স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের অপেক্ষায় আছি৷


(০৭)

রাজনীতিতে দুটি ধারা সমপ্রকট

একটি আদর্শ, ত্যাগ-তিতিক্ষা, সুস্থ ধারার

অপরটি তাবেদারী, কানকথার, অসুস্থ ধারার৷

একটি স্থায়িত্বের আস্বাদনে সুভাসিত

রূপ-রস-গন্ধ সম্বলিত ক্রমবিকাশমান মহীরুহ

অপরটি তাত্‍ক্ষণিক প্রাপ্তির উল্লাসে মাতহারা

পল্বপত্রে টলয়মান শিশির কণাসম৷

বর্তমান সময়টা তাবেদারীর, অসুস্থ ধারার

যার মর্মাথই হলো-

নেতা যা বলেন, তা একাগ্রচিত্তে

অক্ষরে অক্ষরে পালন করা

নেতা করেন, প্রশ্নাতীতভাবে

গগণবিদারী উচ্চকিত প্রশংসায় তাকে

ঐতিহাসিক, এই প্রথমে, কালজ্বয়ী বলে আখ্যায়িত করা৷

এখানে প্রচন্ড দুর্ভিক্ষ লজ্জা সংকোচের, দ্বিধাদ্বন্দ্বের

এখানে অবান্তর দেশীয় ও জাতীয় স্বার্থের

স্রোতের প্রতিকূলে যাওয়া অথবা নীরব দর্শকের ভূমিকা

দুটিই পরাজয় বলে প্রতিভাত৷

অতঃপর বলো, উচ্চস্বরে বলো

খেলারাম দেখে যা

দেশ ও জানি রসাতলে যা, রসাতলে যা৷

অতঃপর বলো, আরো উচ্চস্বরে বলো

জয় তাবেদারীর জয়, জয় তাবেদারী প্রাপ্তির জয়৷

অতঃপর বলো, আরো, আরো উচ্চস্বরে বলো

এবারের সংগ্রাম দেয়ার সংগ্রাম

এবারের সংগ্রাম, তাবেদারীর স্থায়ী কাঠামোগত গণভিত্তি রচনার সংগ্রাম

সংগ্রাম, সংগ্রাম, এ সংগ্রাম চলছে চলবে৷


(০৮)

রাজনীতিতে মেধা, যোগ্যতা

ভদ্রতা, নম্রতা, শিষ্ঠাচার

সামাজিকতার চরম দূর্ভিক্ষ চলছে৷

নেতারা এ দূর্ভিক্ষে বিচলিত নয়,

ভাবখানা এমন যে,

এ ধারা লালনই তাদের নেতৃত্ব্ব টিকিয়ে রাখার

একমাত্র ভরসা৷


(০৯)

উজ্জ্বল নক্ষত্রেয় ন্যায় জ্বলজ্বল করছে

বিভিন্ন আকৃতির, প্রকৃতির ও মতাদর্শের

রাজনৈতিকা দলসমূহ৷-

এ যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে উঠা

ঐক্যমত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন৷


অথচ দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চচর্ায়

সোচ্চার হওয়া মানেই হলো-

হঠকারী, ষড়যন্ত্রকারী, গঠনতন্ত্র বিরোধী

অসংখ্য বিশেষণ ও বিশেষ্য বিশেষণে জর্জরিত হওয়া৷

বৈপরিত্যের এ ধারা আর কতাল চলবে?


(১০)

জনমত স্থান কাল পাত্র নির্ভরশীল মৌসুমী হাওয়াসম৷

স্বপক্ষে থাকলে বৃহষ্পতি তুঙ্গে

বিপক্ষে গেলে তাত্‍ক্ষনিকভাবে শনি রাহু গ্রস্থবত্‍৷


জনমত গড়ে তোলা যত কঠিন

হারানো ততই সোজা৷


(১১)

মনোনয়ন-রাজনীতির কেনা বেচার রমরমা বাজারে

প্রকাশ্যে অথবা গোপনে

সরাসরি অথবা মাধ্যমে

দরকষাকষির টেন্ডার পুরোদমে চলছে৷


আদর্শ, নীতি, বিশ্বাস

মতবাদ, ত্যাগ-তিতীক্ষা

নির্মমভাবে পদদলিত, মথিত, বিসর্জিত আজ

নীতিহীনতা, তাত্‍ক্ষনিক সুবিদাবাদের কাছে৷

ধিক, ধিক, ধিক\\


(১২)

ওডিপতি, কোটিপতি, ঋণখেলাপীদের দাপটে

তছনছ, ওলট-পালট বাংলাদেশের রাজনীতি৷

হতবাক, কোনঠাসা, কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে

হতাশার সাগরে নিমজ্জিত

ত্যাগী, পরিক্ষীত নেতা-কমর্ী শত সহস্র৷


ওডিপতি, কোটিপতি, ঋণখেলাপীদের তৈরী

বন্দিশালা থেকে রাজনীতিকে মুক্ত করতেই হবে

দলের স্বার্থে

দেশের স্বার্থে

ভয় নেই, ভয় নেই, ভয় নেই

আত্মপ্রত্যয়ী, আপোষহীন নতুন প্রজন্মের

পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি৷


(১৩)

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার পক্ষে

রাজনৈতিক দুলগুলো প্রস্তুত নয়

ইস্তেহারে-

গঠনতন্ত্রে-

নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে-

বক্তব্যে-

অথচ প্রতিনিয়ত গলাবাজি করা হচ্ছে

তারা যুগের চেয়ে অনেক, অনেক এগিয়ে আছে৷

আত্ম প্রবঞ্চনা আর কাকে বলে?


(১৪)

বিদেশপন্থী রাজনীতির মহাপ্লাবনের তাণ্ডবলীলায়

ক্ষত-বিক্ষত বাংলাদেশ৷

ডান, বাম, মধ্যম

চরম বাম, চরম ডানের

অভূতপূর্ব রঙ্গলীলা চলছে

স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ৷


আওয়ামীলীগ ভারতপন্থী, এ অভিযোগ আওয়ামী বিরোধী শক্তির

পাকিস্থানপন্থী হয়ে বিএনপি গর্বিত, এ বক্তব্য বিএনপি প্রতিপক্ষের

যখন যেমন তখন তেমন, এ অপবাদে সিক্ত জাতীয় পার্টি

সৌদিপন্থী বলে জামাতের খ্যাতির কোন জুড়ি নেই

ইরানপন্থীরা প্রতিযোগিতায় নেই পিছিয়ে৷

মস্কোপন্থী, চীনপন্থী বনে বিজয়ীর ভাবে আছে

বিভক্ত কমিউনিষ্টরা


মার্কিনপন্থী, সরাসরি হওয়ার সুযোগ নেই৷

আঞ্চলিক শক্তি বলয় থেকেই নাকি তা

স্বাভাবিক নিয়মে নির্ধারিত

যেমনভাবে নদীর লক্ষ্য সাগর

সাগরের লক্ষ্য মহাসাগর৷


এ বলয়ের অবয়বের স্বরূপ ও প্রেক্ষিত

কখনো ঢাকা-দিল্লী-ওয়াশিংটন

কখনো ঢাকা-পিণ্ডি-ওয়াশিংটন

কখনো ঢাকা-পিণ্ডি-রিয়াদ-ওয়াশিংটন

একই ভিসাস সার্কেলে ঘুরপাক খাচ্ছে

বহুধাবিভক্ত শ্রমজীবি-বুদ্ধিজীবি-শিল্পপতি-ছাত্র সমাজ৷


হায়রে স্বাধীনতা, হায়রে সার্বভৌমত্ব

এ লজ্জা রাখিব কোথায়?


(১৫)

রাজনৈতিক সংকট নিরসনে

সিভিল সোসাইটি, রাজনৈতিক দলসমূহ

কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেনা৷

অথচ বিদেশী রাষ্ট্রদূতরা অতি সহজেই এ কাজে সফলকাম হচ্ছে৷

সংকট নিরসনে

ঘর নয়, বাইরের হস্তক্ষেপই রাজনীতিবিদদের অধিকতর পছন্দের বিষয়৷


হায়রে রাজনীতি

হায়রে রাজনীতিবিদ!


(১৬)

দুর্নীতির বিপক্ষে রাজনীতিবিদদের লোক-দেখানো উচ্চকণ্ঠ যতটা সোচ্চার

বাস্তবে ক্ষমতা অথবা ক্ষমতার বাইরে থেকে ততটা সোচ্চার নয়৷

দুর্নীতি লালন ও পালন উভয় কাজে রাজনীতিবিদরা অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে

এ পরিচয় জাতি ও দেশকে গৌরবের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নয়,

এ পরিচয় দেশ ও জাতির মাথাকে নুয়ে দেয়ার জন্য৷


আমি ড. ইউনুসের ঢালাও বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করছি

আমি রাজনীতিবিদদের সুস্থ ধারার বাহক ও ধারকদের কতর্ৃত্বের অপেক্ষায় আছি৷

আমি কোনভাবেই হতাশ নই

সত্য ও সুন্দর আজ হোক আর কাল হোক, প্রতিষ্ঠিত হবেই৷


(১৭)

দেশের বুদ্ধিজীবিগণ বুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্রে

স্বাধীন সত্তা হারিয়ে ৭৫ পূর্ব ও ৭৫ পরবর্তী ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে৷

এ বিভক্ত দু'ধারার বাইরে যারা অবস্থান করছেন বা করতে চাচ্ছেন

তাদের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ৷


অথচ দেশ ও জাতির স্বার্থেই স্বাধীন সত্তাকে

এবং

তৃতীয় ধারাকে সচল থাকতে হবে৷


(১৮)

নিরপেক্ষ ব্যক্তির সন্ধান ও প্রাপ্তি যতটা সহজ

নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবে কোনো পদে আসীন হয়ে টিকে থাকা

ততটা সহজ নয়

যেমন সহজ নয় রাজনীতি নির্ভর কোন ব্যক্তির পক্ষে

নিরপেক্ষ ভাবে টিকে থাকা

এটা যেমন সত্য রাষ্ট্রপতি, স্পীকার পদের জন্য

তেমনি সত্য যে কোন সাংবিধানিক পদের জন্য৷


রাাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন, আব্দুর রহমান বিশ্বাস, ইয়াজউদ্দিন

স্পীকার মোহাম্মদ উল্লাহ, মির্জা গোলাম হাফিজ,

হুমায়ুন রশীদ চেীধুরী, জমির উদ্দীন সরকার

প্রধান নির্বাচনা কমিশনার বিচারপতি সুলতান হোসেন,

বিচারপতি আব্দুর রইফ, আবু হেনা

এবং বিচারপতি আব্দুল আজিজ

সকলেই এ সত্যেরই প্রতিধ্বনি করছেন৷


(১৯)

সত্‍ হওয়া মানেই সমাজে ও রাষ্ট্রে দুর্বল বলে আখ্যায়িত হওয়া

সত্‍ হওয়া মানেই বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয় স্বজন সকলের নিকট

বোকা বলে বিবেচিত হওয়া

সত্‍ হওয়া মানেই সংসারে- ভাইবোন, সন্তান সন্ততি এবং

স্ত্রীর নিকট অপদার্থ বলে বিবেচিত হওয়া

সত্‍ হওয়া মানেই ভীরু, কাপুরুষ এ জাতীয় বিশেষণে বিশেষিত হওয়া৷

সত্‍ হওয়া মানেই প্রতি মুহূর্তেই বিপরীতমুখী স্রোতের দিকে ধাবিত হওয়া৷

সত্‍ হওয়া মানেই আপনজনদের দাবী দাওয়া থেকে পালিয়ে বেড়ানো৷

সত্‍ হওয়া মানেই অতি গোপনে, সতর্কভাবে চলাফেরা করা৷


সততা এখন আর কোন গুণ নয়,

নিছক অপবাদ, ব্যর্থতার সমার্থক৷

আমি হতাশ নই...................

আমি আশাবাদী

আজ হোক, কাল হোক

অনিয়মের নিয়মের সমাপ্তি ঘটবেই

সততার জয় হবেই হবে৷


(২০)

রাজনীতিদিরা যুব সমাজ ও ছাত্র সমাজ নিয়ে

সর্বত্র, সবসময় ভালো ভালো বক্তব্য রাখে

যুব রাজনীতি ও ছাত্র রাজনীতির বর্তমান নেতিবাচক ধারা নিয়ে

এমন ভাব দেখায় যে, যেন তারা মনে প্রাণেই বিশ্বাস করেন

এ ধারা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়৷

এ ধারা অবশ্যই বিলুপ্ত হওয়া জরুরী৷


অথচ বাস্তবে এ ধারাকে সচল ও পুঁজি করেই তারা তাদের

রাজনৈতিক বহুমুখি কর্মকান্ডকে সক্রিয় করার পক্ষে৷

নিজের সন্তান অথবা নিজের কোন ঘনিষ্ট আপনজন যাতে

এ ধারায় সম্পৃক্ত না হয় সে ব্যাপারে তারা সদা সচেতন৷

নিজের সন্তান ভালো স্কুলে পড়বে, প্রয়োজনে বিদেশে যাবে

ছাত্র রাজনীতি ও যুব রাজনীতিকে উপেক্ষা করবে

এটা তারা মনে প্রাণে চান এবং বিশ্বাস করেন৷


রাজনীতিবিদদের সন্তান সন্ততি ও স্বজননির্ভর ছাত্র ও যুব রাজনীতি নয়

বরং অন্যের সন্তান সন্ততি ও স্বজননির্ভ ছাত্র ও যুব রাজনীতিই যেন

রাজনীতিবিদদের মৌলিক অধিকারের অন্তভর্ুক্ত৷